আঊযুবিল্লাহি মিনাশ্শাইত্বোয়ানির রাজিম
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সর্বপ্রথম, যে আয়াত টি মহাগ্রন্থ আল্ কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, সেই আয়াত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ, আশ্চর্যের বিষয় হলো এই এতবড় এবং অশেষ রহমতে ভরা অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন, প্রথম বাক্যের অর্থ, ফজিলত, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ খুব কমই দেখা গেছে,
আসুন দেখি পড়ে বুঝার চেষ্টা করি যে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পাক আমাদের কি বোঝাতে চেয়েছেন।
আলহামদুলিল্লাহি রব্বীল আ-লামীন।
আলহামদু = সমস্ত প্রশংসা
লিল্লাহি = আল্লাহর
রব্বীল = যিনি রব
আ-লামীন = সারা জাহানের
মূল অর্থ = সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সারা জাহানের রব।
আলহামদুলিল্লাহি = সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর,
রব্বীল আ-লামীন = যিনি সারা জাহানের রব।
আল্ কুরআনের সর্বপ্রথম সূরা-ফাতিহা, এই সূরা কে উম্মূল কুরআনও বলা হয়।
সূরা ফাতিহার শুরু এই সর্বপ্রথম বাক্যেটিতে, পরম করুণাময় আল্লাহ আমাদের কি বোঝাতে চেয়েছেন, একটুখানি আন্তরিকভাবে অনুভব করার চেষ্টা করি।
আল্লাহ বলছেন,
আলহামদুলিল্লাহি রব্বীল আ-লামীন = সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সারা জাহানের রব = দয়াময় আল্লাহ পাক তার বান্দাদের শিখিয়ে দিচ্ছেন যে কিভাবে তার প্রশংসা করতে হয়।
সারা জাহানে যদি কেউ সর্বোচ্চ প্রশংসার অধিকারী হয় বা থাকে সে আমাদের রব - তার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা।
দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সত্য পথ প্রদর্শক হিসেবে, আল্ কুরআন কে নাযীল করেছেন সে জন্য তিনি প্রশংসার অধিকারী, তাইতো তিনি প্রশংসিত রব।
শেষ রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে শেষ উম্মতের জন্য দুনিয়াতে প্রেরণ, ও সারা জাহানের উম্মতের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ, রাব্বুল আলামীন তাইতো প্রশংসিত, তিনিই মহান।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাধ্যমে, আল্ কুরআন-কে নাযীল করেছেন বলেই তিনি আল্লাহ পাক প্রশংসিত, প্রতিটি মানুষের নিকট প্রশংসিত।
পাপী কিংবা নেক ইনসানের রিযিককের ব্যবস্থা করেন দয়াময় আল্লাহ্, তাইতো তিনি প্রশংসিত, যারা রবের প্রশংসা করেনা তারাই তো প্রকৃত জালিম ও নেমকহারাম।
খূটি বিহীন আসমান, ছাঁদ বিহীন পৃথিবী সৃষ্টি, সূর্যের আলো, চাঁদের কিরণ দিয়ে, মেঘ থেকে বৃষ্টি দানে যমিনকে উর্বর রাখেন তিনিই মহান আল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা রাব্বুল আলামীনের।
বিভিন্ন রকমের মাটিতে বিভিন্ন রকমের ফসল উৎপাদন করান সুনিপুণ সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ কারিগর মহান রাব্বুল আলামীন, তাইতো তিনি প্রশংসিত রব, দয়াময় আল্লাহ।
তারই আধিপত্য সমগ্র জাহানে, দৃশ্য ও অদৃশ্যের মালিক এক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। সারা জাহান বলতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, সমগ্র জাহানে তার ই রাজত্ব।
দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞান একমাত্র তারই ।
দৃশ্যমান = মানুষ, পশু, পাখী, কিটপতঙ্গ, গাছপালা, জমিনের অবকাঠামো, পাহাড়, নদী, মহাসাগর, সূর্য, চন্দ্র, আলো অন্ধকার সহ আরো অনেক কিছুই যে দৃশ্যমান তা আমরা অনেকেই জানি, এগুলো সারা জাহানের মালিকের রাজত্বে দৃশ্যমান। এই প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের।
তদ্রূপ,
অদৃশ্যের জ্ঞানী সৃষ্টি তারই, তিনিই রব, একমাত্র আল্লাহ্।
অদৃশ্য সৃষ্টি = মানুষের রূহ, মানুষের ইলম/জ্ঞান, মানুষের শ্বাস/নিঃশ্বাস, গর্ভস্হান এর ভিতরে সৃষ্টির সময়কাল, বাতাস , জ্বীন-জাতি, ফেরেশতা জাতি, ইবলীশ শয়তান, কবরজীবন, আখেরাত, বেহেস্ত, দোযখ, সাত আসমান এমনকি আল্লাহর আরশ, এগুলো গায়েবি বা অদৃশ্য সৃষ্টি মহান রাব্বুল আলামীনের, তাইতো তিনি প্রশংসিত রব।
সমগ্র জাহান তার ই অধীন, তিনি-ই সমস্ত প্রশংসার অধিকারী, তাইতো বলতে হয় আলহামদুলিল্লাহি রব্বীল আ-লামীন।
রাতে ঘুমন্ত আমি ও আপনাকে সকালে কে জাগায় ? তিনিই মালিকিন্নাস = (মানুষের মালিক) ।
ভেবেছেন কি কখনো, ক্লান্ত, পরীশ্রান্ত, রাতে ঘুমন্ত মানুষটি যদি সকালে ঘুম থেকে না উঠত কি হোত ?
স্নিগ্ধ আবেশে, ক্লান্তি ঝড়িয়ে, ফুরফুরে মেজাজে, চাঙা দেহ মনে, নিষ্পাপ সূরতে সকালে তিনি তার বান্দাদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন, একমাত্র আল্লাহ্, তিনি প্রশংসার ঊর্ধ্বে।
আলহামদুলিল্লাহি রব্বীল আ-লামীন।
পরিশেষেে : আমারা যদি হৃদয় ও মন দিয়ে এই আয়াত টির সরল বাংলা অর্থসহ বাস্তবজীবনে বর্ণনা, বিশ্লেষণ বোঝার চেষ্টা করি তাহলে অবশ্যই এটা বোধগম্য হবে যে, আলহামদুলিল্লাহি রব্বীল আ-লামীন আয়াত টির কত অশেষ রহমত, এ আয়াতের জিকির করা প্রতিটি বান্দার জন্য কতটা নেয়ামত পূর্ণ, কতটা অত্যাবশ্যকীয়।
আসুন রাব্বুল আলামীনের জিকির করি, আলহামদুলিল্লাহি রব্বীল আ-লামীন।
রাব্বী যিদনী ইলমা = হে আল্লাহ্ জ্ঞান দান করুন।
Discover unknown truth in "THE HOLY QURAN" এ আমি যেন আমার সাধারণ, স্বাবলীল ভাষায়, পবিত্র আল্ কুরআনের বাণী মানুষের বোধগম্য করতে পারি, সেই ইলম আপনি আমাকে দান করুন, আলহামদুলিল্লাহি রব্বীল আ-লামীন।
আমরা সৌভাগ্যক্রমে সর্বশেষ রাসূল হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এর উম্মত হতে পেরে সৌভাগ্যবান, তাইতো তিনি মহা প্রশংসিত রব, দয়াময় রহমান।
সারা জাহানে উন্মোচিত ইসলামকে একমাত্র শান্তির ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করায় তিনি প্রশংসিত রব, আলহামদুলিল্লাহি রব্বীল আ-লামীন।
এই আয়াতের ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ লিখে শেষ করা যাবেনা।
তাইতো মহান রব নিজেই নিজের প্রশংসা করে বলেন = সারা জাহানের গাছগুলো যদি কলম হোত, আর সাগরের ও সাত সমুদ্রের পানি যদি কালি হোত, তবুও তোমার রবের গুণগান/প্রশংসার বাণী লিখে শেষ হবেনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। সূরা লুকমান, আয়াত - ২৭ ।
বন্ধুরা,
এর আগের পোস্টে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম-এ রাহমানির রাহিম শব্দগুলো নিয়ে ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি, তাইতো এবার পরবর্তী পোষ্টে এ ৩য় আয়াত নিয়ে আসছি
মালিকি - ইয়াওমেদ্দীন = বিচার দিবসের মালিক।
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহী ওয়া বারাকাতু।
মোহাম্মদ খলিল ।।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন